top of page

চিচেন ইৎজা - Chichen Itza

নাম - চিচেন ইৎজা(Chichen Itza)

স্থান - মেক্সিকো(Mexico)

উচ্চতা - 24 মিটার (79 ফুট), মন্দির ছাড়াই

           30 মিটার (98 ফুট), মন্দির সহ

             6 মিটার (20 ফুট), মন্দির

          “চিচেন ইৎজা” মূলত প্রাক-কলম্বিয়ান সময়ের মায়ানদের একটি বড় শহর। এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি মেক্সিকোর ইউকাতান রাজ্যের তিনুম পৌরসভায় অবস্থিত। সে সময়ে এটি মায়ানদের উত্তরাংশের নিম্নভূমির একটি প্রধান কেন্দ্র ছিলো।(৬০০ থেকে ১২০০ সাল) উত্তর ইউকাতান উপদ্বীপ খুবই শুষ্ক ছিলো এবং যে নদীগুলি ছিলো সেগুলি সবগুলিই ভুগর্বস্থের। দুটি প্রাকৃতিক ডোবা ছিলো যেগুলি সারা বছরই চিচেনকে পানির যোগান দিতো। ডোবাগুলি “সেনোট” নামে ডাকা হতো, তার মধ্যে জনপ্রিয়টি হলো “সেনোট সাগ্রাদো” বা “পবিত্র সেনোট”। পরবর্তী নথি থেকে (মায়ান এবং স্প্যানিশ) জানা যায় যে, প্রাক-কলম্বিয়ান মায়ানরা বিভিন্ন প্রাণী এবং মানুষ বলি দিতো তাদের বৃষ্টির দেবতা “চ্যাক”-কে সন্তুষ্টির জন্যে। ১৯০৪ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত এডওয়ার্ড হার্বার্ট থম্পসন সেই “সেনোট সাগ্রাদো” সেঁচে সোনা, মৃৎশিল্প, ধূপসহ মানুষের দেহভস্মের অংশ উদ্ধার করেন।

          ১৯৮০ সালের কতিপয় প্রত্নতাত্ত্বিকবিদগণ মত দেন যে, চিচেন ইৎজা হয়তোবা কোন একক শাসক বা রাজবংশীয় গোত্র দ্বারা শাসিত হয়নি। সম্ভবত শহরের রাজনৈতিক সংস্থাটি একটি পরিকাঠামো তৈরি করেছিলেন যার মাধ্যমে একটি পরিষদের হাতে শাসন ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হতো। ১৯৯০ এর আগ পর্যন্ত এই ধারণাগুলি বিরাজ করতো, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটি ভুল ব্যাখ্যা বলা হচ্ছে। বর্তমানে মায়ানদের ঐতিজ্যবাহী রাজতন্ত্রের কথাই উঠে আসতেছে। উত্তরাংশের মায়ান নিম্নভূমির চিচেন ইৎজাই সে সময়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একটি ক্ষমতাশালী শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। মূলত পানি পথেই ব্যবসা বাণিজ্যের সম্বৃদ্ধি। চিচেন ইৎজাতে যেসমস্ত জিনিস পাওয়া যেতো না সেগুলি তারা বাহির থেকে আমদানি করা হতো। যেমন মধ্য মেক্সিকো থেকে কালো রঙের আগ্নেয় শিলা আর দক্ষিণাংশের মধ্য আমেরিকা থেকে সোনা। ৯০০ এবং ১০৫০ সালের মধ্যকাল সময়ে চিচেন ইৎজা ক্ষমতাশালী আঞ্চলিক রাজধানীতে সম্প্রসারিত হয়ে উত্তর ও মধ্য ইউকাতানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। যেখানে কিনা তারা আইলা সেরিতোসকে বাণিজ্যিক বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

 

          ৭৫০ এবং ৯০০ সালের মধ্যেকার সময়ে চিচেন ইৎজার নকশা পরিকল্পনা করা হয়। চূড়ান্ত নকশা ৯০০ সালের পর সংশোধন করে দশম শতাব্দীর দিকে শহরটি পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠে। চিচেন ইৎজা তার স্বর্ণযুগের আমলে অন্যতম প্রধান শহরে পরিণত হয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, আদর্শগতিক ইত্যাদি দিক দিয়ে। চিচেন ইৎজার এই উত্থানে অনেক শহরেরই পতন ঘটে যায়। তবে মায়ান দিনপঞ্জি অনুসারে তেরশ শতাব্দীর সময়ে মায়াপ্যানের শাসক চিচেন ইৎজা দখল করে নেয়। এরপর আসে স্প্যানিশরা। ১৫২৭ সালে স্প্যানিশরা ইউকাতানের অধিকাংশ অংশই দখলে নিয়ে নেয়। তাদের সেই দখলদারিত্বের মৌসুম ১৫৩১ সালে শেষ হয়ে যায় একটি দুর্গ নির্মাণের পরে। যেটি কিনা এখনকার ক্যানকান। এরপরে আবারও তাদের আগ্রাসন ফিরে আসে। স্প্যানিশরা চিচেন ইৎজা দখলের পর সেটিকে “সিউদাদ রিয়াল” নামে নামকরণ করে। পরবর্তীতে ১৫৩৫ সালে মায়ানদের অবরোধের ফলে এবং স্প্যানিশদের সৈন্য সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে স্প্যানিশরা চিচেন ইৎজা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

          ১৮৪৩ সালের সময়ের দিকে চিচেন ইৎজা বিশ্ববাসীর নজরে আসে বইয়ে প্রকাশ পাওয়ার মাধ্যমে। তারপর থেকেই এটিকে নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে যায়। অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক চিচেন ইৎজাতে খোঁড়াখুঁড়ির মাধ্যমে বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র উদ্ধার করেছেন।

চিচেন ইৎজার মধ্যে সেসমস্ত স্থাপনা রয়েছেঃ

  • এল ক্যাস্তিয়ো

  • গ্রেট বল কোর্ট

  • জম্পান্টলি অথবা স্কাল প্লাটফর্ম

  • সেক্রিড সেনোট

  • টেম্পল অফ দ্য ওয়ারিওরস

  • গ্রুপ অফ অ্যা থাউজেন্ড কলামস্

  • এল মারকাদো

  • ওসারিও গ্রুপ

  • কেসা কলোরাডা গ্রুপ

  • সেন্ট্রাল গ্রুপ

  • লাস মঞ্জাসএল ক্যারাকল

  • অ্যাক্যাব জিপ

  • ওল্ড চিচেন

  • কেভস্ অফ বাল্যানকাঞ্ছ

          চিচেন ইৎজা মেক্সিকোর মধ্যে অন্যতম প্রধান পর্যটন স্থান। ২০০৭ সালে হিসেব করা হয় যে প্রতি বছর প্রায় গড়ে দশ লক্ষ বিশ হাজার পর্যটক চিচেন ইৎজা ভ্রমণের জন্যে আসে। ১৯৮৮ সালে ইউনেস্কো এটিকে “ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট” হিসেবে ঘোষণা করে।

 

          এটি মায়ানদের বৃহত্তম শহরগুলোর একটি এবং প্রত্নতাত্তি্বক শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। চিচেন ইৎজায় প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করে থাকে। আক্ষরিক অর্থে চিচেন ইৎজার অর্থ দাঁড়ায় ইৎজার কুয়ার মুখে। চি অর্থ মুখ, চেন অর্থ কুয়া। ইৎজা একটি গোত্রের নাম। আশির দশকে অনেক প্রত্নতাত্তি্বক মত দেন, মায়ান সভ্যতার অন্য শহরগুলোর মতো চিচেন ইৎজায় নির্দিষ্ট একজন শাসক ছিলেন না। চিচেন ইৎজা মায়ানদের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর একটি ছিল। ১৮৪৩ সালে জন লয়েড স্টিফেন্সের লেখা ইনসিডেন্টস অব ট্রাভেলস বইটির মাধ্যমে চিচেন ইৎজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বলা হয়, মায়ানদের সময়ে বিভিন্ন গোত্রের মানুষ এখানে প্রার্থনা করত। এ শহরটি নিয়ে প্রচলিত ছিল নানা ধরনের বিশ্বাস। শহরটিতে নানা ধরনের স্থাপত্যশৈলীর তৈরি পাথরের অনেক দালান রয়েছে। এসব দালান দেখতে প্রতিবছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মেক্সিকো ভ্রমণ করে থাকে। বর্তমানে চিচেন ইৎজা মেক্সিকোর রাষ্ট্রীয় সম্পদ, ইতিহাস ও নৃতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে।

Ancient History
প্রাচীনইতিহাস
bottom of page