top of page

চীনের মহাপ্রাচীর-The Great Wall of China

নাম - চীনের মহাপ্রাচীর

স্থান - প্রাচীন মিং চীন এবং মঙ্গোলিয়ার সীমান্ত বরাবর

নির্মিত - আনুমানিক তৃতীয় শতাব্দীর বিসি

উচ্চতা - প্রায় ৫ থেকে ৮ মিটার

প্রস্থ - নীচে ২০ ফুট, শীর্ষে ১৬ ফুট (৬ - ৫ মি)

দৈর্ঘ্য - ২১,১৯৬.১৮ কিমি

          বিশ্বের সাতটি বিষ্ময়ের অত্যতম আখ্যয়িত মহা প্রাচীর হচ্ছে বিশ্বের এমন একটি প্রাচীন কালের সামরিক প্রতিরক্ষা প্রকল্প যার নিমার্নের ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘ এবং আকার সবচেয়ে বিরাট। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে খ্রিস্টীয় ১৬শ শতক পর্যন্ত সময়ে চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করার জন্য এ প্রাচীর তৈরি শুরু করা হয়। ২২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হওয়া কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ১৫ বছর। যা ইট আর পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়। এ সময় প্রায় একইরকম অনেকগুলো প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, তবে খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২২০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। সে সময় মাঞ্চুরিয়া আর মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুরা চিনের বিভিন্ন অংশে আক্রমন করতো এবং বিভিন্ন ক্ষতি সাধন করতো ফলে দস্যুদের হাত থেকে চীনকে রক্ষা করার জন্য এই প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল। কিন শি হুয়াং এর মৃত্যু এবং কিন রাজবংশের পতনের সাথে সাথে গ্রেট ওয়ালটির বেশিরভাগ অংশই ভেঙে পড়েছিল। পরবর্তীকালে হান রাজবংশের পতনের পরে উত্তর চীনতে একাধিক সীমান্ত উপজাতি নিয়ন্ত্রণ দখল করে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল উত্তর ওয়েই রাজবংশ, যা অন্য উপজাতির আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বিদ্যমান প্রাচীরটি মেরামত ও প্রসারিত করেছিল। বর্তমানে চীনের মহাপ্রাচীর বলতে মিং রাজবংশ আমলে  নির্মিত মহাপ্রাচীরকেই বুঝায়। এটা চীনের পশ্চিমাংশের গানসু প্রদেশের চিয়াইউ চোকা থেকে চীনের উত্তর-পূর্ব লিওনিন প্রদেশের য়ালোচিয়াং নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই মহাপ্রাচীর চীনের ৯টি প্রদেশ, শহর, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।

 

          প্রতিরক্ষা প্রকল্প হিসেবে এই মহাপ্রাচীর চীনের বহু পাহাড় এবং চীনের কতিপয় মরুভূমি, মালভূমি, জলাভূমি অতিক্রম করে গেছে। মহাপ্রাচীরের বেশিরভাগ অংশই আঁকাবাঁকা এবং উচু-নিচু পাহাড়ের ভিতর দিয়ে গেছে। এই প্রাচীর বিভিন্ন পাহাড়কে সংযুক্তও করেছে। এই মহাপ্রাচীরে ব্যবহার করা হয়েছে বড় বড় ইট আর লম্বা লম্বা পাথর। এর গড় উচ্চতা প্রায় দশ মিটার। তার প্রস্থ ৪ থেকে ৫ মিটার। যুদ্ধের সময় খাদ্য আর অস্ত্র সরবরাহের সুবিধার জন্য প্রাচীরে উপরের অংশে সমান পথের সৃষ্টি করা হয়েছিল। এছাড়া দেওয়ালের ভিতরে উঠা নামার উপযোগী পাথরের সিড়ির পথও আছে। প্রাচীরের কিছু দূর পর পর টাওয়ার রয়েছে। এ সব টাওয়ারে অস্ত্র, খাদ্য রাখার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া রয়েছে সৈন্যদের বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা। এছাড়া যুদ্ধের সময় সৈন্যরা এই টাওয়ারগুলোকে ছোটো বাংকারের মতো ব্যবহার করতে পারতো। প্রয়োজনে টাওয়ারে আগুন বা ধোঁয়া সৃষ্টি করে সতর্ক সংবাদ জারি করতে পারতো।

         বর্তমানে চীনের সিনচিয়াং, কানসু, নিনশিয়া, চিয়াংশি, ইনার মঙ্গোলিয়া, শানসি, হোপেই, পেইচিং, থিয়েনচিন, লিয়াওনিং, চিলিন, হোইলুংচিয়াং, হোনান, শান্তুং, হুপেই ইত্যাদি অঞ্চলে মহাপ্রাচীরের প্রাচীন অংশের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এর উদ্দেশ্য শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, গ্রেট ওয়ালটি অবনতি হতে দেওয়া হয়েছিল এবং এর কিছু অংশ এমনকি বিল্ডিং উপাদানগুলির জন্য বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। তবে ১৯৮৪ সাল থেকে সরকার প্রাচীর সংরক্ষণ ও দেশের প্রতীক হিসাবে ব্যবহারে আগ্রহী। বিশেষত পর্যটন কেন্দ্রগুলির নিকটবর্তী বড় অংশগুলি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। 1987 সালে মহা প্রাচীরকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

Ancient History
প্রাচীনইতিহাস
bottom of page